ভুল – একটি দৃষ্টিকোণ

মায়েরা ভুল বোঝায়, দেখায় অনেক ভুল,
সবকিছু এমনিই ঠিক হয়ে যায় না, কারণ টাকে উহ্য রেখে দেওয়া ভুল,
সে ভালো করেই জানে ছোট্ট সন্তান একদিন বড়ো হবে,
যে গঙ্গোত্রীতেই জন্ম হোক না কেন গন্তব্য সেই সাগরের দিকেই থাকে,

মায়েরা ভুল বোঝায়, কাজ যেমনই হোক ফলাফল ভালো হবে, ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখো,
কিন্তু সেই ঈশ্বর যে নিরুপায় যদি কর্মীসুলভ মানসিকতা না রাখো,
কর্মের হারের সাথে পরমঈশ্বরের সহযোগিতার হার সমানুপাতিক,
নিজের কর্মে, মানের কোনো সীমারেখা নেই, সেই মায়ের দরুন  প্রতিভাবান তুমি,

নিজ প্রতিভাকে কর্মে রূপান্তরণ সম্পূর্ণ রূপে দেখানো হয় না,
মায়েদের স্নেহে কর্মীসুলভ পাগলামির স্থান কোনোকালেই যে থাকে না,
জীবন বাঁচা, উপভোগ করার সাথে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চলে দ্বন্ধ,
মানুষ অভ্যেসের দাস, এছাড়া মানসিকতা গড়া স্তব্ধ,

জনসমুদ্র ও বাস্তবিকতা সম্পর্কে আমার প্রথম শিক্ষিকা সব জানে,
বড়ো হয়ে সব শিখে যাবে, এ আবার কিরকম বিশ্বাস সে মানে?,
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিকাশ ও প্রগতি কিভাবে আসে নেই জানা,
দেশের অবস্থা দেখে, সে কিছুই কি শেখে না?

শৃঙ্খলাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর সাথে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য জরুরি,
বাবা শৃঙ্খলার হাল ধরলে মায়ের  ভাঙার দিকে দুই পদক্ষেপ চলা সর্বদাই কি জরুরি?
দ্বন্দ্ব থেকে ভ্রমের স্রষ্টি, কারণ অভিজ্ঞতার ঘাটতি,
স্নেহের প্রতিফলনে বাবা শত্রু, তার নীতি মেনে আর লাভ কি,

বেড়ে ওঠার সাথে বাস্তবিকতার মাঝে মধ্যেই দেখা হয়,
শৃঙ্খলা ও কর্মীসুলভ আচরণের প্রয়োজনীয়তার বারবার সে জানান দেয়,
মায়েরা ভুল বোঝায়, বলে পরের বার ঠিক ভালো হবে,
উহ্য রাখে পদ্ধতি, যা ভবিষ্যতে বড়ো আকার ধারণ করে,

চাওয়া পাওয়ার সমীকরণ ঈশ্বরের হাতে, তাতে কারো হাত নেই,
কর্মকেন্দ্রিক জগতে প্রাপ্য কি, যদি কৃতকর্মের গুরুত্ব সম্পর্কিত বোধগম্যতা নেই,
মায়েরা ভুল বোঝায়, অর্ধেক কথা বলে,
সন্তানের কষ্টে তার অনুভূতি সবচেয়ে বেশি, তাও কেন প্রশ্রয় দিতে থাকে?

তার অভিজ্ঞতা বেশি, দেখেছে পৃথিবী অনেকখানি,
একটা সময় অবদি তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দুটোই থাকে সন্তানের চেয়ে অনেক বেশি,
চরম আনন্দ কর্মের মধ্যে ও মেলামেশার মাঝখানে,
দুটোর ওপরই চরম সংশয়, আগলে বেঁধে রাখার নাম করে,

আসলে, সবচেয়ে স্নেহের পাত্রদের আমরা সবাই আগলে রাখি,
সবচেয়ে দামি যারা, তাদের চোখের মনি করে রাখি,
কিন্তু মানুষ বড়ো হয়, সেখানে কাজে লাগে উপস্থিত বুদ্ধি আর দর্শন,
সবসময় যে সে সাথে থাকতে পারবে না, অজানা তথ্য নয় কিন্তু প্রাধান্যে মন?

বাবা মা দুটি চরিত্র অদ্ভুত, কম অভিজ্ঞতার কাছে আরো অদ্ভুতুড়ে,
কখনো ধমক, কখনো আদর, নৈতিকতা কি জিনিস যাক না সে চুলোতে,
আমরাও দেখে বেশি শিখি, শুনে শিখি কম, খুদের মনে ছোট্ট প্রশ্ন,
আমাদের মায়েরা কেন প্রশিক্ষণ দেয় না, যেমনটার চল রয়েছে বন্যে সর্বক্ষণ?

বাইরের সমাজ ও কর্মজীবনের জন্য গুনকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ মেলে,
দর্শনকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ না থাকার দরুন বিশ্বাস আর টিকে থাকার ধৈর্যের ঘাটতির অজুহাত মেলে,
এসমস্ত গুন কোনো প্রশিক্ষণাগারে শেখানো হয় না, গুটি কয়েক শিক্ষক শিক্ষিকারাই শেখান,
মায়েরা তাদেরই একজন, আরেকটা কারণ হিসেবে বলা যায়, কাছের মানুষের শব্দগুলোর ছাপ গভীর, উর্দ্ধে সমস্ত মান আর স্তর,

পুঁথিগত বিদ্যার সাথে, জীবনশৈলীকেন্দ্রিক বিদ্যার রয়েছে প্রয়োজন,
অনভিজ্ঞ বন্ধুদের কাছে দর্শন শেখার মতো অভাগা রয়েছে প্রচুর, আর কেন আয়োজন,
বাড়িতে যখন অভিজ্ঞতা রয়েছে, যে মাত্রাতেই হোক, সমৃদ্ধির প্রয়োজন,
নারীশিক্ষার গুরুত্ব কতখানি আজ বুঝেছে স্বল্প কিছু জন,

তবু মায়েরা ভুল বুঝিয়ে বলে, সব শিখে যাবে তুমি, সম্মান ও প্রতিষ্ঠা তুমি পাবে,
খুদের মনে ছোট্ট প্রশ্ন, এমনি এমনি কি তা হবে?
অনেকেই বলবেন হয়তো, অনেক কাজ, সময়ের ঘাটতি রয়েছে,
ঠিকই, তবু বিশ্বাস যে, উদ্দেশ্যের সাথে আবেগী ইচ্ছের মেলবন্ধনে পথের সন্ধান ঠিক মেলে,

বিশ্বাসের সাথে কর্ম প্রয়োজন, নইলে বিশ্বাস বৃথা,
মায়েরা বিশ্বাস গড়ে আর কর্মের স্থান থাকে অনেকাংশে ফাঁকা,
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বাবার কি কোনো দায় নেই?
অনেক দায়িত্ব ও অজুহাত প্রস্তুত, তাই সবার মতো মায়ের আশ্রয়ই নিই,

সন্তান আমিও, তাই অভ্যেসটার ফেরবদল আজও ঘটেনি,
পরিবারের মাঝে, বাস্তব সমাজে মানুষদের নানান ভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে দেখছি,
লড়াই ও ধৈর্যের একটু ইন্ধন যদি বাড়ি থেকে এসে জোটে,
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বরাদ্দে বাঁচার অক্সিজেন যদি একটু করে বাড়ে ক্রমে,

সন্তান ভালো থাকুক বোধয় সব অভিভাবকরাই চান,
অর্থের চেয়ে বড়ো রসদ জীবন, যদি একটু পরিবারে তারা শেখান,
অর্থ উপার্জন নাহয় শিখলো সে সমাজের অনভিজ্ঞদের মাঝে,
দর্শন ও জীবনশৈলী গড়ুক শৈশব থেকে স্নেহের পরিবেশে অভিজ্ঞদের সাথে,

কারো কিছুই এসে যায় না, মানুষের স্মৃতি আজ খুবই অল্প,
সমাজে দেশের জন্য লড়াই করা সৈনিকদেরও প্রমান চাওয়া হয়, খুব অল্পই করে সাহায্য,
বাস্তব আর সময়কে সবাই গালিগালাজ করে, কিন্তু এরাই প্রকৃত শিক্ষকের ভূমিকায় প্রত্যেকের জীবনে আসে,
মনের জোর হারালে অনেকেই জীবনের রাস্তা ভুল করে,

চোখের জলে বাইরের মানুষ স্বার্থসিদ্ধির রাস্তা দেখে,
নিঃস্বার্থ ভাবে অভিভাবকরাইতো কিছুদিন হলেও সঙ্গে থাকে,
স্বল্পদিনের সঙ্গে যদি স্থায়ী দর্শনের রচনা ঘটে,
সন্তানের সাথে সমাজ প্রতারণার চেয়ে সমৃদ্ধির রাস্তা বেশি দেখে,

মায়েরা সন্তানের প্রতি নরম হলেও সমাজের প্রতি বেশ কঠোর,
সমাজের প্রতি আচরণের কিছু ভঙ্গিমা জানা তাদের প্রত্যেকের,দক্ষতা বেশ প্রখর,
পরিবার শুধুই স্নেহ, আদরের চরণক্ষেত্র নয়, সাথে সেখানে জীবনদর্শন বাস করে,
কোনোকিছুই স্বয়ংক্রিয় নয় এখানে, পশ্চাতে হেতুর উপস্থিতি সর্বদা থাকে।

দোষারোপ নয়, গুরুত্বের উপলব্ধিকরণের উদ্দেশ্য,
বিকলাঙ্গ নয়, সক্ষম ও সমৃদ্ধ মানুষের ঘাটতি লক্ষ্যণীয়,
উপার্জন ও আত্ম্যহতার হরে চিন্তিত, কাগজের মূল্য বাড়ছে, জীবন আজ হারছে এতো সংখ্যায় কেন?
যাদের হাতে জন্ম, পরোক্ষভাবে তারাই মেরে ফেলছে না তো? 

1 thought on “ভুল – একটি দৃষ্টিকোণ”

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s