মানুষ নিজের ক্ষমতা, স্বার্থ ও সাধ্য অনুযায়ী দোষারোপ , অপমান , কখনো কাউকে ছোট করে, হেনস্থা করে, আবার কেউ কেউ তার নিজের অতিত থেকে কিছু তিক্ত স্মৃতির প্রেক্ষাপটে হেনস্থা ও দোষারোপ জনক কাজ সমাজের বুকে সম্পাদন করে। কখনো কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্ব, বিভাগ, ঘটনা আবার কখনো সরকার; প্রত্যেক প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদ করার নাম নিয়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলার নাম নিয়ে, অন্যের জন্য বরাদ্দ কাজে অবহেলা গুলিকে খুঁজে বের করা, তাকে তুলে ধরা ও তাদের উদ্দেশ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দাবি করা আবার কখনো উপযুক্ত ব্যক্তিত্বদের সেই স্থানে এসে তুলে ধরা ক্ষেত্রের হাল ধরার অনুরোধ করা সাধারণত হয়ে থাকে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, কাজ ঠিক হচ্ছে না, অবহেলা হচ্ছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব বা বিভাগ কাজ করছে না, এক কথায় একে বলা হয় প্রতিবাদ, ব্যক্তিগত জীবনে, ছোট বড়ো বিভিন্ন পর্যায়ে এর নাম হয়ে যায় দোষারোপ। কেউ কাজ ঠিক করে না করলে তাকে বলা উচিত নিশ্চই, কণ্ঠ তোলা উচিত নিশ্চই কিন্তু শুধু কি এটুকুই করণীয়? অনেকেই বলতে পারেন আমি ব্যস্ত থাকি, নিজের কর্মব্যস্ততার মাঝে আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি করে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু এই প্রতিবাদের সাথে সাথে তার সপক্ষে নিজ দ্বারা যদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া, নিজের পক্ষে সম্ভব না হলে কাউকে অনুপ্রাণিত করে হোক, সেই সমস্যার সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টার দিকে কি জোর দেওয়া ঠিক নয়? কারণ প্রতিবাদ করা হয় বৃহৎ সামাজিক স্বার্থে, যেখানে অনেক মানুষ জড়িয়ে থাকেন। শুধু কি আঙ্গুল তুলে, প্রশ্ন করে, একটি বক্তব্যকে সমস্ত স্তরে পৌঁছে দেওয়াটাই কি প্রতিবাদ ও কণ্ঠ তোলার উদ্দেশ্য? সমাধানহীন প্রতিবাদী চিন্তাধারা সমস্ত ক্ষেত্রে সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত সুনিপুন ভাবে করতে পারে ঠিকই কিন্তু সমাধানের দিকে এগিয়ে কে নিয়ে যাবে? অনেকেরই ধারণা সেই কাজটি অন্য কেউ করবেন। আমার কাজ বলা, সমস্যা তুলে ধরা। এর ফলে সমাজে যে ঘটনাটি প্রায়ই দেখা যায়, যে কথা বলছেন অনেক মানুষ কিন্তু মাঠে নেমে কাজটিকে সম্পাদন করার বেলায় লোকবল, মনোবলের ঘাটতি এসে পড়ে। একটি বৃহৎ মানুষের দল বিশ্বের বুকে এই নীতিতে বিশ্বাস করেন যে সরকারের বা উর্ধতন কতৃপক্ষের কর্তব্য সমস্ত কিছু সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পাদন করা। আমরা নাগরিক, আমরা বিভিন্ন খাতে, বিভিন্ন ভাবে কর দিয়ে থাকি ব্যাস, বাকি সব কিছু দায়িত্ব সিস্টেমের ও উর্ধতন কতৃপক্ষের ও সরকারের। বক্তব্যটি খানিকটা ওই বাজার করার জন্য লোক নিয়োগের মতো। টাকা দিয়ে বাজার পাঠিয়ে দেওয়া হলো, এরপর সে ঠিক ঠাক বাজার না করতে পারলে কিভাবে বাজার করতে হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া বা দরকার পড়লে নিজে একদিন তাকে বাজার করা দেখিয়ে না দিয়ে তার কাজের ভর্ৎসনা করা এবং তার উদ্দেশ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো। এরূপ মতাদর্শের পশ্চাতে আরো এক যুক্তি বার বার উঠে আসে যে, তার কাজ যদি আমি বা আমরা করে দিই তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি বা বিভাগ তো আরাম করে বেতনভোগ করবে, সুবিধে পেয়ে যাবে, কাজেই অন্যের জন্য বরাদ্দ করা কাজ আমি বা আমরা কেন করবো? এর চেয়ে ভালো প্রতিবাদী কণ্ঠের মাধ্যমে তাদের দিয়েই কাজ করানো হোক। বিষয়টি হল, সামাজিক প্রেক্ষাপটে ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও অঙ্গুলি ওঠানোতেই আমরা অনেক সময় থেমে যাই, যার প্রভাব বাকি অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জীবনে পরোক্ষ ভাবে পড়ে, আর সেই ছোট ছোট প্রভাব কখন নিজেদের বৃহৎ ব্যক্তিত্বের ওপর ছাপ ফেলতে থাকে ঠিক টের ও পাওয়া যায় না । প্রতিবাদ করা, কণ্ঠে সরব হওয়ার পাশাপাশি সমাধানসূত্রের দিকে মনোনিবেশ যেকোনো কর্ম সম্পাদনের জট যেমন কাটিয়ে তোলার সম্ভাবনাকে বাড়ায় ঠিক তেমনই একটি সাহসী, নির্ভীক ও আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্বের জন্ম দেয়। এতে কোনো ব্যক্তিত্ব কারো দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার ভ্রমে ভ্রমিত হতে পারেন কিন্তু সর্বশেষে জাতির উদ্দেশ্যে, দেশের উদ্দেশ্যে আর সবচেয়ে বড়ো মানুষের উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদনই বৃহৎ স্বার্থ এবং সমস্ত কর্ম তার সুপরিকল্পিত পরিণামের সাথে দেখা করার সুযোগ তখনই পায় যখন পরিকল্পনাকারী মস্তিষ্কের পেছনে থাকা মানসিক ভাব বা স্বত্বা ভারসাম্যযুক্ত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বিমুখ হয়। আজ বক্তা প্রচুর, কর্মী কম, শব্দ বেশি শ্রোতা কম , বিশৃঙ্খলা বেশি, উদ্বিগ্নতা বেশি, আত্মবিশ্বাস কম কারণ ভবিষ্যতের প্রতি চিন্তা বেশি, বর্তমানে নিজ অভীষ্টের উদ্দেশ্যে কৃত কর্ম কম, সময় বাঁচানোর উপাদান বেশি কিন্তু সময়কে নিজ অভীষ্টের উদ্দেশ্যে সদ্ব্যবহার করার মানসিকতা কম, অবসাদগ্রস্ততা বেশি কারণ এখুনি চাই, ধৈর্য্য কম। সময় বাঁচানোর উপাদান বেশি কিন্তু মনের কাছে অভীষ্টের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ সময় খুবই কম, অজুহাত, দোষারোপ করার অভ্যেসকে ঢাল বানিয়ে প্রতিভা লোপাট করছে কিন্তু প্রশ্ন করাকে সমাজ আজ নতুন বিনোদনের তকমা দিয়েছে। কতৃপক্ষ যেই হোক, দোষারোপ করার পাশাপাশি আসুক সমাধানসূত্র খোঁজার ও তার প্রয়োগ করার প্রয়াস। বিরোধিতার নাম বিশৃঙ্খলা নয়, প্রতিবাদের নাম বিশৃঙ্খলা নয়, প্রতিবাদের সাথে আসুক মিলে মিশে সমাধানসূত্র খোঁজার ও প্রয়োগযোগ্য উন্নত গুণমানের সমাধান বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের প্রয়াস। কতৃপক্ষ নিজ পছন্দের কেউ না হলেই তার কর্মযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, পদ্ধতির ওপর প্রশ্ন ও অসহযোগিতা কোনোদিনই গণতান্ত্রিক নয়। নিজের অপছন্দের প্রত্যেকেই অন্য কারো না কারোর পছন্দের এবং সম্মানযোগ্য। কর্মসম্পাদন উদ্দেশ্য, শুধু দোষারোপ করে, প্রশ্ন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি নয়, সমাজের বুকে প্রশ্নের সাথে সমাধানসূত্রের প্রতি নিজের বিনিয়োগে আনন্দ, শান্তি ও উৎকৃষ্টতা আসার সম্ভাবনা বাড়তে পারে, বিশৃঙ্খলার মতো ঋণাত্মকতা বাড়তে পারে না।
Like this:
Like Loading...
Related
Published by Raktim Chakraborty
Raktim Chakraborty who is also known as Sastri Ji is a Teacher, Lifestyle & Motivational Strategist.
View all posts by Raktim Chakraborty